সিলেটের ওসমানীনগর থানা পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে হাতকড়া অবস্থায় ছিনিয়ে নেওয়া একাধিক হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ ক্যাডার আকছার আলীকে (৫০) ৩৬ ঘন্টার পর বুধবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তার হাতকড়াটি পুলিশ উদ্ধার করেছে।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, হাতকড়া পড়া হত্যা মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আকছার আলী ও তার সঙ্গীদের ধরতে অভিযান চলছে।
উল্লেখ, পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকছারকে গ্রেফতার করে থানায় হাতকড়া পড়িয়ে থানা নিয়ে যাওয়ার সময় তার আত্মীয়স্বজনরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে আকছার আলীকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার হাজিপুর গ্রামে আসামি ছিনতাইয়ের এই ঘটনা ঘটে। পলাতক আকছার আলী পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার একাধিক মামলার আসামি।
ওসমানীনগর থানার ওসি মোনায়েম মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশি অভিযান জোরদার করা হলেও জড়িত কাউকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করা করেছে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের জোড় চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার হাজিপুর গ্রামে স্থানীয় একটি হাওড়ে এক কৃষককে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার একাধিক মামলার আসামি আওয়ামীলীগ ক্যাডার আকছার আলীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার স্বজনরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর-পর পুলিশের গাড়ীতে হামলা ও আসামী ছিনতাইয়ের ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এতে রাত ৮ টা পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া আসামী ও তার স্বজনদের গ্রেফতার করতে পুলিশ লোক দেখানো অভিযান করলেও পরবর্তীতে ওই এলাকায় আর কোন পুলিশি অভিযান পরিচালিত হয়নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ওসমানীনগরে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা আগেও ঘটেছে,পুলিশের কাছ থেকে দুর্র্ধষ আসামী ছিনতাইয়রে ঘটনা এটি নতুন নয়, এর আগেও ঘটেছিল উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের রাউৎখাই গ্রামে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ওসমানীনগর থানার এস আই বিষ্ণু পদ রায়ের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এজাহার নামিয় আসামি আওয়ামীলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমানের বাড়িতে তল্লাসি করে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে বাড়ির মহিলাসহ আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে বাঁধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে আওয়ামীলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমানের লোকজন পুলিশের সাথে ধস্তধস্তি করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সেই আসামী পুনরায় পুলিশ গ্রেফতার করছে কি-না তার আর জানা যায় নি।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল ওসমানীনগরে। তার মধ্যে আওয়ামীলীগ ক্যাডার আকছার আলী অন্যতম। ব্যক্তিগত ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে তিনি ভাই ও স্বজনদের মাধ্যমে জেলার প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছিল তাঁর একক আধিপত্য। জমি দখল, কমিশন বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি-সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন । ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পরপরই আত্মগোপনে থেকেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে একক নেতৃত্ব দিয়ে আসছে তাদের পরিবার। একইভাবে মঙ্গলবার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা নজির সৃষ্টি করে।