, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সিলেটে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপিত ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে : সাংবাদিক কর্মশালায় বক্তারা জৈন্তাপুরে ব্যবসায়ীর উপর সন্ত্রাসী হামলায় আদালতে মামলা দায়ের ‘সিলেটের পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত এটা বৈষম্যের শামিল’ অসমর্থ মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে : জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল হাসান নির্বাচনের আগেই বয়কট একাংশের : প্রশ্নবিদ্ধ সিলেট উইমেন চেম্বার সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে চিকিৎসকের লাথি মারার ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে কমিটি সিলেটে প্রতিবেশীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপি নেত্রীর পদ স্থগিত আমেরিকা ইউরোপের ৫টি দেশসহ উচ্চ শিক্ষার জন্য তিন সহস্রাধিক রেজিষ্ট্রেশন স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালকের দেওয়ানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

নির্বাচনের আগেই বয়কট একাংশের : প্রশ্নবিদ্ধ সিলেট উইমেন চেম্বার

নির্বাচনকে সামনে রেখে কার্যত এখন দুটি পক্ষে বিভক্ত সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। এর একটি অংশে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী এবং অপর পক্ষে আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা। লুবানা পক্ষের অভিযোগ- উইমেন চেম্বারকে রাজনীতি করণের প্রচেষ্টা চলছে। আর সামিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই অভিযোগ সত্য নয়। নারী উদ্যোক্তারা অবশ্যই সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

এদিকে নবায়ন ফি’ জমাদানের শেষ দিনে লুবানা গ্রুপ সদস্য ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকায় সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সদস্যরা। এর ফলে প্রশাসক পেলেও আসন্ন নির্বাচনে উইমেন চেম্বারে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে।

উইমেন চেম্বারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সদস্য নবায়ন ফি’ জমাদানের শেষ তারিখ ছিল। কিন্তু ওই দিন উইমেন চেম্বারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা গ্রুপের সদস্যরা চেম্বার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শেষ সময়ে এসে ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকে। এর ফলে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালো ওই পক্ষ। আর অপরপক্ষ সামিয়া বেগম চৌধুরীর পক্ষের ১৭৮ টি ফরম (দুই দফায়) জমা প্রদান করা হয়। তবে প্রশাসক কর্তৃক প্রথম দফায় নবায়ন ফি’ জমাদান ঘোষণার তারিখ ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত লুবানা গ্রুপের পক্ষে ৯০ টি ফরম জমাদান করা হয়। আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সদস্যদের ফরম ও তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ভোটার তালিকা প্রদান করা হবে বলে চেম্বারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসকের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল ছিল সদস্যদের নবায়ন ফি জমাদানের চূড়ান্ত তারিখ। কিন্তু একটি অংশের লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে চেম্বারের প্রশাসক ১৭ এপ্রিল শেষ দিনে এসে আরো ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নবায়ন সীমা বর্ধিত করেন। সময় সীমা বৃদ্ধি নিয়ে চেম্বারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন পক্ষের লোকজন ওইদিনই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লুবানা ইয়াসমিন পক্ষের লোকজন উইমেন চেম্বারকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, উইমেন চেম্বার নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান। এখানে দল,মত নির্বিশেষ সকল নারী উদ্যোক্তারা ভোটাধিকারের অধিকার সংরক্ষণ করেন। সুতরাং এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না।
তবে সে সময় এমন প্রশ্নের জবাবে সামিয়া বেগম চৌধুরী গণমাধ্যমকে -এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তাদের নবায়ন ফি’ ৮ হাজার টাকা প্রদান করা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রশাসক মহোদয় সময়সীমা ১৭ এপ্রিল থেকে ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেন।

বিষয়টি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য উল্লেখ করেছেন লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, প্রশাসক রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। যে কারণে তিনি এক পক্ষের সাথে কথা বলে হঠাৎ করেই ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করে তাদেরকে গণহারে সদস্য নবায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে আমরা ফরম জমাদান থেকে বিরত থেকেছি।

চেম্বারের প্রতিষ্ঠাকালীন এক সদস্য (বর্তমানে প্রবাসী) নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সিলেটে হাতে গোনা কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা সকলের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক হারে ফরম জমাদানের বিষয়টি সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে নি:সন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

অপর সদস্য কলি আক্তার জানান, ফরম সংগ্রহ পরবর্তী ২৭ এপ্রিল তা জমা দিতে উইমেন চেম্বারের কার্যালয়ে উপস্থিত হই। সেখানে ফরম জমা দিতে আসা অধিকাংশ নারীকে উদ্যোক্তা বলে মনে হয় নি। ফলে বিষয়টি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি বুঝি না এবং রাজনীতির লোকও নই। সুতরাং উদ্যোক্তা সদস্যের বিপরীতে কোন পক্ষের সূবিধার জন্য অচেনা লোকদের ভিড়ে নিজেকে জড়াতে চাই না বলেই ফরম জমাদান থেকে বিরত থেকেছি।

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে জড়িত নিবন্ধিত নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। ২০১৫ সালে এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হলে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বর্ণলতা রায়। সংগঠনের লক্ষ্য হল মহিলা উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার সমস্ত পদক্ষেপগুলিকে সুরক্ষা, বিকাশ, সমর্থন এবং প্রচার করা। এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ হবে ১১ সদস্যের। এর সদস্য ছিল ৪ টি শ্রেণীর। শ্রেণীগুলো হল সবুজকুঁড়ি, সাধারণ, ওর্ডিনারী ও এসোসিয়েট। তবে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা ছিল অর্ডিনারি ও এসোসিয়েট শ্রেণীর। ৪ টি ক্যাটাগরিতে যার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২২০ জন। ক্যাটাগরি ৪ টি হলো সবুজকুঁড়ি, সাধারণ, ওর্ডিনারী ও এসোসিয়েট। এই দুই শ্রেণীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৩ জন। প্রশাসক নিয়োগ পরবর্তী এখন কেবল দুটি ক্যাটাগরিতে সদস্য ফি নবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভোটাধিকারের ক্ষমতা থাকবে কেবলমাত্র অর্ডিনারি শ্রেণীর। তবে সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ পাবেন এসোসিয়েট শ্রেণীও। এসোসিয়েট শ্রেণীতে সদস্য ফি ৩ হাজার টাকা এবং অর্ডিনারি সদস্য পদে ৮ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির খুঁটির জোড়ে কোনো নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। এ নিয়ে সদস্যদের ক্ষোভ ছিল। তবে সভাপতির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারো। কিন্তু ৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। টানা ১০ বছর সভাপতি পদে আসীন থাকা স্বর্ণলতা রায় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিলে প্রথমবারের মতো ১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সিলেট উইমেন চেম্বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করা হয় এবং প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘ বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলপূর্বক নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।’

এদিকে, উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তির পর পরই একটি সুষ্টু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রশাসক মো. নুরের জামান চৌধুরী শুরুতেই তৎপর হয়ে উঠেন। সেই লক্ষ্যে তিনি সিলেট উইমেন চেম্বারের সকল সদস্যদের নিয়ে প্রথম বৈঠক থেকেই সকলের সিদ্বান্ত অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল সদস্যপদ নবায়নের সর্বশেষ তারিখ ঘোষণা করেন। সদস্য পদ নবায়নের শেষ দিন নির্ধারিত তারিখে উইমেন চেম্বারের কার্যালয়ে ভিড় ছিল সকল সদস্যদের। তবে বিকাল ৫ টার ৫ মিনিট আগেই প্রশাসকের একটি ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিকাল সোয়া ৫ টায় চেম্বার কার্যালয়ে আসেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার। প্রশাসকের পক্ষে তিনি জানান, সদস্য নবায়নের সময়সীমা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
ফরম সংগ্রহ করার পরও ২৭ এপ্রিল শেষ দিনে ফরম জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক বলেছেন, সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাহলে আমরা কি চেম্বারের সদস্য নই ? যদি উত্তর হ্যা হয়, তাহলে আমরা কেন বিষয়টি জানলাম না। প্রশাসক বলেছেন, এতো কম সময়ে নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষে জনপ্রতি ৮ হাজার টাকা প্রদান করা অসম্ভব উল্লেখ করে সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা বাড়ানো হয়েছে। লুবানা ইয়াসমিন বলেন, যারা টাকার অভাবে নবায়ন ফি দিতে পারে নাই, তারা আবার উদ্যোক্তা হয় কিভাবে ? আর যদি আর্থিক অসূবিধাই থাকবে, তাহলে হঠাৎ করে সবার পক্ষে একদিনে এতো টাকা যোগাড় করা হল কিভাবে ? এই প্রশ্নের উত্তর জেনে গেলেই রাজনীতিকরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাই আমরা পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে নবায়ন ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকি।

তবে সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে একজন নারী উদ্যোক্তার পক্ষে ৮ হাজার টাকা প্রদান করা খুবই কষ্টসাধ্য। ফলে চেম্বার প্রশাসক বরাবরে বিষয়টি বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসক মহোদয় ১৭ এপ্রিল থেকে নবায়ন সময়সীমা ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেন। রাজনীতি করণের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতির বাহিরেও একজন মানুষের অন্যান্য পরিচয় থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। সুতরাং বিষয়টি রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অপপ্রচার চালানো ঠিক হবে না।

চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, ফরম জমা নেওয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জনপ্রিয়

সিলেটে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপিত

নির্বাচনের আগেই বয়কট একাংশের : প্রশ্নবিদ্ধ সিলেট উইমেন চেম্বার

প্রকাশের সময় : ৪ ঘন্টা আগে

নির্বাচনকে সামনে রেখে কার্যত এখন দুটি পক্ষে বিভক্ত সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। এর একটি অংশে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী এবং অপর পক্ষে আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা। লুবানা পক্ষের অভিযোগ- উইমেন চেম্বারকে রাজনীতি করণের প্রচেষ্টা চলছে। আর সামিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই অভিযোগ সত্য নয়। নারী উদ্যোক্তারা অবশ্যই সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

এদিকে নবায়ন ফি’ জমাদানের শেষ দিনে লুবানা গ্রুপ সদস্য ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকায় সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সদস্যরা। এর ফলে প্রশাসক পেলেও আসন্ন নির্বাচনে উইমেন চেম্বারে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে।

উইমেন চেম্বারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সদস্য নবায়ন ফি’ জমাদানের শেষ তারিখ ছিল। কিন্তু ওই দিন উইমেন চেম্বারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা গ্রুপের সদস্যরা চেম্বার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শেষ সময়ে এসে ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকে। এর ফলে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালো ওই পক্ষ। আর অপরপক্ষ সামিয়া বেগম চৌধুরীর পক্ষের ১৭৮ টি ফরম (দুই দফায়) জমা প্রদান করা হয়। তবে প্রশাসক কর্তৃক প্রথম দফায় নবায়ন ফি’ জমাদান ঘোষণার তারিখ ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত লুবানা গ্রুপের পক্ষে ৯০ টি ফরম জমাদান করা হয়। আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সদস্যদের ফরম ও তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ভোটার তালিকা প্রদান করা হবে বলে চেম্বারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসকের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল ছিল সদস্যদের নবায়ন ফি জমাদানের চূড়ান্ত তারিখ। কিন্তু একটি অংশের লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে চেম্বারের প্রশাসক ১৭ এপ্রিল শেষ দিনে এসে আরো ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নবায়ন সীমা বর্ধিত করেন। সময় সীমা বৃদ্ধি নিয়ে চেম্বারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন পক্ষের লোকজন ওইদিনই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লুবানা ইয়াসমিন পক্ষের লোকজন উইমেন চেম্বারকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, উইমেন চেম্বার নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান। এখানে দল,মত নির্বিশেষ সকল নারী উদ্যোক্তারা ভোটাধিকারের অধিকার সংরক্ষণ করেন। সুতরাং এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না।
তবে সে সময় এমন প্রশ্নের জবাবে সামিয়া বেগম চৌধুরী গণমাধ্যমকে -এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তাদের নবায়ন ফি’ ৮ হাজার টাকা প্রদান করা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রশাসক মহোদয় সময়সীমা ১৭ এপ্রিল থেকে ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেন।

বিষয়টি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য উল্লেখ করেছেন লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, প্রশাসক রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। যে কারণে তিনি এক পক্ষের সাথে কথা বলে হঠাৎ করেই ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করে তাদেরকে গণহারে সদস্য নবায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে আমরা ফরম জমাদান থেকে বিরত থেকেছি।

চেম্বারের প্রতিষ্ঠাকালীন এক সদস্য (বর্তমানে প্রবাসী) নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সিলেটে হাতে গোনা কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা সকলের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক হারে ফরম জমাদানের বিষয়টি সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে নি:সন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

অপর সদস্য কলি আক্তার জানান, ফরম সংগ্রহ পরবর্তী ২৭ এপ্রিল তা জমা দিতে উইমেন চেম্বারের কার্যালয়ে উপস্থিত হই। সেখানে ফরম জমা দিতে আসা অধিকাংশ নারীকে উদ্যোক্তা বলে মনে হয় নি। ফলে বিষয়টি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি বুঝি না এবং রাজনীতির লোকও নই। সুতরাং উদ্যোক্তা সদস্যের বিপরীতে কোন পক্ষের সূবিধার জন্য অচেনা লোকদের ভিড়ে নিজেকে জড়াতে চাই না বলেই ফরম জমাদান থেকে বিরত থেকেছি।

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে জড়িত নিবন্ধিত নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। ২০১৫ সালে এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হলে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বর্ণলতা রায়। সংগঠনের লক্ষ্য হল মহিলা উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার সমস্ত পদক্ষেপগুলিকে সুরক্ষা, বিকাশ, সমর্থন এবং প্রচার করা। এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ হবে ১১ সদস্যের। এর সদস্য ছিল ৪ টি শ্রেণীর। শ্রেণীগুলো হল সবুজকুঁড়ি, সাধারণ, ওর্ডিনারী ও এসোসিয়েট। তবে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা ছিল অর্ডিনারি ও এসোসিয়েট শ্রেণীর। ৪ টি ক্যাটাগরিতে যার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২২০ জন। ক্যাটাগরি ৪ টি হলো সবুজকুঁড়ি, সাধারণ, ওর্ডিনারী ও এসোসিয়েট। এই দুই শ্রেণীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৩ জন। প্রশাসক নিয়োগ পরবর্তী এখন কেবল দুটি ক্যাটাগরিতে সদস্য ফি নবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভোটাধিকারের ক্ষমতা থাকবে কেবলমাত্র অর্ডিনারি শ্রেণীর। তবে সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ পাবেন এসোসিয়েট শ্রেণীও। এসোসিয়েট শ্রেণীতে সদস্য ফি ৩ হাজার টাকা এবং অর্ডিনারি সদস্য পদে ৮ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির খুঁটির জোড়ে কোনো নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। এ নিয়ে সদস্যদের ক্ষোভ ছিল। তবে সভাপতির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারো। কিন্তু ৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। টানা ১০ বছর সভাপতি পদে আসীন থাকা স্বর্ণলতা রায় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিলে প্রথমবারের মতো ১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সিলেট উইমেন চেম্বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করা হয় এবং প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘ বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলপূর্বক নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।’

এদিকে, উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তির পর পরই একটি সুষ্টু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রশাসক মো. নুরের জামান চৌধুরী শুরুতেই তৎপর হয়ে উঠেন। সেই লক্ষ্যে তিনি সিলেট উইমেন চেম্বারের সকল সদস্যদের নিয়ে প্রথম বৈঠক থেকেই সকলের সিদ্বান্ত অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল সদস্যপদ নবায়নের সর্বশেষ তারিখ ঘোষণা করেন। সদস্য পদ নবায়নের শেষ দিন নির্ধারিত তারিখে উইমেন চেম্বারের কার্যালয়ে ভিড় ছিল সকল সদস্যদের। তবে বিকাল ৫ টার ৫ মিনিট আগেই প্রশাসকের একটি ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিকাল সোয়া ৫ টায় চেম্বার কার্যালয়ে আসেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার। প্রশাসকের পক্ষে তিনি জানান, সদস্য নবায়নের সময়সীমা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
ফরম সংগ্রহ করার পরও ২৭ এপ্রিল শেষ দিনে ফরম জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক বলেছেন, সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাহলে আমরা কি চেম্বারের সদস্য নই ? যদি উত্তর হ্যা হয়, তাহলে আমরা কেন বিষয়টি জানলাম না। প্রশাসক বলেছেন, এতো কম সময়ে নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষে জনপ্রতি ৮ হাজার টাকা প্রদান করা অসম্ভব উল্লেখ করে সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা বাড়ানো হয়েছে। লুবানা ইয়াসমিন বলেন, যারা টাকার অভাবে নবায়ন ফি দিতে পারে নাই, তারা আবার উদ্যোক্তা হয় কিভাবে ? আর যদি আর্থিক অসূবিধাই থাকবে, তাহলে হঠাৎ করে সবার পক্ষে একদিনে এতো টাকা যোগাড় করা হল কিভাবে ? এই প্রশ্নের উত্তর জেনে গেলেই রাজনীতিকরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাই আমরা পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে নবায়ন ফরম জমাদান থেকে বিরত থাকি।

তবে সামিয়া বেগম চৌধুরী বলেন, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে একজন নারী উদ্যোক্তার পক্ষে ৮ হাজার টাকা প্রদান করা খুবই কষ্টসাধ্য। ফলে চেম্বার প্রশাসক বরাবরে বিষয়টি বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসক মহোদয় ১৭ এপ্রিল থেকে নবায়ন সময়সীমা ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেন। রাজনীতি করণের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতির বাহিরেও একজন মানুষের অন্যান্য পরিচয় থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। সুতরাং বিষয়টি রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অপপ্রচার চালানো ঠিক হবে না।

চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, ফরম জমা নেওয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।