বজ্রবৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টির কারনে রাজনগর উপজেলায় কাউয়া দীঘি হাওরে পাকা-আধা পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অতিমাত্রায় ভারি বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির কারণে খলা, আঙ্গিনা ও জমিতেই পচে-গলে ভাসছে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি পাকা ধান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারনে শতশত হেক্টর জমির পাকা ধানে পানি জমে পচে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কম্পেইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটাতে বাধ্য হয়ে গুনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ পারিশ্রমিক । এক বিঘা জমির ধান কাটাতে ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে কৃষকদের । যদিও প্রতি বিঘা জমির জন্য ১ হাজার ৮ শত টাকা সরকারি ভাবে মজুরী ধার্য্য করা হয়েছে। অন্যদিকে ৮০০ শত থেকে ৯০০ টাকায় দিনমজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে চোখে-মুখে হতাশা আর চরম দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উপজেলায় মাঝে মধ্যে ঝড়ো বাতাসের সাথে হালকা বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলায় অনেক স্থানে ধান ঝড়ো বাতাসে নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষেতে পানি জমেছে। আবার কাটা ধান বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে বসেছে। শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও চাষিরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর রাজনগরে কাউয়া দীঘি হাওরে সর্বত্র বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান ঘরে তোলার মৌসুম। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার থেকে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে প্রতিদিন। অনেক এলাকায় ধান বৃষ্টি শুরুর আগে কাটা শুরু হলেও, হাওরের ৪০ শতাংশ ধান কাটা এখনো বাকি রয়েছে। আবার অসংখ্য চাষির ধান কাটা অবস্থায় মাঠে রয়েছে। পাকা ধান ভিজে যাওয়ায় কৃষকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেননি। ফলে গন্ধ হয়ে গেছে ধানে। বৃষ্টি ভেজা ধান ও গাছে আক্রমণ করেছে ছত্রাক। শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর (অঙ্কুরোদগম) হচ্ছে। ফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না বলে শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের কৃষক মো: আনছার মিয়া জানান, “বৃষ্টিতে তাদের মাঠের অধিকাংশ পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। ভালোভাবে পাকার আগেই অনেকে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ দিনমজুর না পাওয়ায় অনেকে ধান কাটতেও পারেননি। আবার শ্রমিকেরা ভিজে ধান কাটতে ও বহন করতে অতিরিক্ত মজুরী দাবী করছে। ফলে কৃষক শেষ সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতে মহাবিপাকে পড়েছেন। তাদের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই।’
কৃষক মো: নূর মিয়া,খালেদ আহমদ, প্রসেন দাশ, নূরুজ্জামানসহ অনেকেই বলেন, গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার পাকা ধানের ক্ষেতে পানি জমেছে। বিঘার পর বিঘা জমির ধান হেলে পড়েছে। ধান কাটার মেশিন দিয়ে হেলে পড়া ধান কাটা যাচ্ছেনা। কাদা বা পানি জমে থাকা ক্ষেত থেকে ধান কাটতে চাচ্ছে না বেশিরভাগ শ্রমিক। কেউ রাজি হলেও পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছে কৃষক। এমন জমি থেকে ধান কাটতে শ্রমিকদেরও অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, ১৪ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে । এবছর উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৯১ হাজার মেট্রিক টন চাল। কিন্তু ধান কেটে ঘরে তোলার সময়ে গত এক সপ্তাহের ঝড়-বৃষ্টিতে কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে এখনও যদি বৃষ্টিপাত বন্ধ হয় এবং জমিতে জমে থাকা পানি নেমে যায় তবে তেমন একটা ক্ষতি হবে না। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তদারকী চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।