সিলেটের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত জাফলংকে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা প্রদান সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষায় সিলেটের ভোলাগঞ্জ, উৎমাছড়া, রতনপুর, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর মহালেও নতুন করে কোনো ইজারা দেওয়া হবে না।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে গেজেটভুক্ত পাথর, সিলিকাবালু, নুড়ি পাথর ও সাদা মাটি কোয়ারিগুলোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে পরিবেশগত বিবেচনায় ১৭টি কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইসিএ এলাকায় অবস্থিত জাফলংসহ আদালতের নিষেধাজ্ঞাধীন কোয়ারিগুলোতেও ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয় এবং ইজারা প্রদান স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি কয়েকটি কোয়ারিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও জারি ছিল। তবে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কোয়ারিগুলো পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এ অবস্থায় গত ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় কোয়ারির ইজারা প্রদানের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এতে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কোয়ারি চালুর আশা প্রকাশ করেছিলেন। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববারের সভায় নতুন করে ইজারা স্থগিত রাখাসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, অন্যান্য কোয়ারিতে ইজারা প্রদানের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে শ্রমিকদের নয়, প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত কোনো পাথর বিক্রি না করে কাস্টমসের মাধ্যমে সরকারের নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হবে।
সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শুধু পাথর মহাল নয়, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন রোধেও একই নীতিমালা অনুসরণ করা যেতে পারে। এতে পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষা পাবে এবং বালি ও পাথরের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ আইনের আওতায় জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
তিনি আরও জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর পূর্বের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এখন থেকে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।