বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হবার ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন হদিস মিলেনি বিএনপির এই নেতার।
এম ইলিয়াস আলী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, যখন নিখোঁজ হন, তখন তার বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব স্কুলে পড়তেন। সেই আবরার এখন ব্যারিস্টার। অন্য ছেলে লাবিব সাহার ও একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাওয়ালও বড় হয়ে গেছেন। কিন্তু বাবার আদর সোহাগ পায়নি। বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গাড়িচালক আনসার আলীও সার সাথে নিখোঁজ রয়েছেন।
রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। ১৩ বছর হয়ে গেল, এখনো অজানা রয়ে গেছে তার হারিয়ে যাওয়া রহস্য।
দীর্ঘ একযুগের ও বেশি সময় ধরে তার সন্ধান চেয়ে বিএনপি ও তার সুহৃদরা দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। ইলিয়াস আলীর পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন তার ফেরার অপেক্ষায়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগ চান তারা। শুরু থেকে ইলিয়াস আলীর ‘গুমের’ জন্য সরকারকে দায়ী করে আসছে তার অনুসারীরা এবং দলগতভাবে বিএনপি।
ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবি জানেন না, তিনি আদৌ আর কখনও শুনবেন সেই স্নেহভরা “মা” ডাক। সন্তানের ফিরে আসার আশায় এখনও চেয়ে থাকেন পথের দিকে। আর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা এখনো বিশ্বাস করেন—একদিন তার স্বামী ফিরে আসবেন।
গত ১৩ বছরে ইলিয়াস আলীকে নিয়ে বহু গুঞ্জন, অনেক বক্তব্য ও ভিডিও সামনে এলেও, পরিবার ও নেতাকর্মীরা সবসময়ই থেকেছেন অবিচল। তাদের বিশ্বাস—ইলিয়াস আলী এখনও বেঁচে আছেন এবং কোনো একদিন ফিরে আসবেন, ফিরিয়ে আনবে এই দেশের বিবেক।
নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পত্নী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা তাহসিনা রুশদির লুনা বলেন, ১৩ বছর থেকে একি কথা বলতে আর ভালো লাগে না। ১৩ বছর ধরে আমার বাসায় হাসির কোন পরিবেশ নেই। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে গেলেই সবারই একটাই প্রশ্ন- ইলিয়াস আলীর কোন খবর আছে? সবসময় এসব প্রশ্ন আমাদের ফেস করতে হয়। প্রথম দিকে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী কোর্ট রিটের কারণে ৬ মাস পরপর তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে একটা রিপোর্ট দিলেও বেশ কয়েক বছর ধরে তাও আর দেওয়া হচ্ছে না। মামলাটি হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে গেছে।
তার সন্ধানের দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা গড়ে তোলেন ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। শুরুর দিকে বেশ সক্রিয় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম। তবে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানরা চেয়ে রয়েছেন তিনি হয়তো একদিন ফিরে আসবেন।