ভারতের পাহাড় থেকে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে নেমে এসেছে অসংখ্য খাল, ছড়া ও নদী। মিশেছে অগুনতি হাওরে। এসব নদী ও খালসহ জেলার ভেতর প্রবাহিত অন্যান্য নদ-নদী, খালও দিন দিন পাহাড়ি ঢলে আসা বালু-পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এতে হাওর-জলাভূমির প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, নদী ও খাল ভরাট হওয়ায় হাওরে বিলম্বিত হচ্ছে বর্ষা। এতে প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে ফসলহানির ঘটনা ঘটছে। হাওরের প্রাণপ্রবাহ হিসেবে পরিচিত নদীপ্রবাহের ক্ষতি হাওরের কৃষি, প্রতিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জীবনধারাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
এর মধ্যে ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা-মেঘালয় পাহাড় থেকে জেলার অভ্যন্তরে ১৮টি নদী এসেছে। এ ছাড়া ছোট-বড় আরো শতাধিক ছড়া (নালা) বা খাল রয়েছে। উজান থেকে ভাটিতে পানিপ্রবাহের প্রধান মাধ্যম এসব নদী ও ছড়া। তবে ভরাট হতে হতে এখন শুষ্ক মৌসুমেও নদী ও ছড়াগুলোকে চেনার উপায় নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে জেলায় ১০৬টি নদী রয়েছে। অসংখ্য ছড়া বা নালা পাহাড় থেকে নেমে আসার কথা স্বীকার করলেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাউবোর হাতে নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুদিন আগে জেলার খননযোগ্য নদ-নদী ও খালের তালিকা করেছে। ওই তালিকায় ৪৩টি নদ-নদী ও খালের প্রায় ৯২৫ কিলোমিটার খননের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় সীমান্ত নদী কংস, উবদাখালী, চেলা, খাসিয়ামারা খননের কথাও বলা আছে।
তবে ছড়াগুলোর তালিকা ও খনন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি ওই প্রকল্পের প্রস্তাবে। এ নদীগুলোর আবার আন্ত জেলা সংযোগও রয়েছে। এগুলো হলো আশাউড়া, কংস, ডোবাইল, সোমেশ্বরী, উপদাখালী, বহর, জালিয়া, উমিয়াম, চিলাই, জালিয়াছড়া, যাদুকাটা, ধোপাজান, খাসিয়ামারা, সোনালি চেলা, মৌলা, ভোলাখালি, কুশিউড়া ও মরাচেলা।
পাউবোর সিলেট বিভাগের তালিকায় সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের নদী হলো বহর ও আশাউড়া। বহরের দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৪৬ কিলোমিটার এবং আশাউড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। দীর্ঘ নদী সোমেশ্বরী, উপদাখালী ও যাদুকাটা যথাক্রমে ৬২, ৫১ ও ৩৭ কিলোমিটার।
সরেজমিনে যাদুকাটা নদীর উৎসমুখে গিয়ে দেখা যায় নদীটি ভরাট হয়ে প্রকৃতি বদলে গেছে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে মোটরসাইকেল। নদীটির চারদিকেই বিস্তৃত বালুচর। কোথাও রূপ নিয়েছে হ্রদে। পাশের পচাশোল, সমসার হাওরের বেশির ভাগ ভরাট হয়ে গেছে। এসব এলাকার পুকুরও ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে প্রতিবছরই ভেঙে যায় সড়ক ও বসতবাড়ি। ছড়াগুলো ভরাট হওয়ার কারণে এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাওরের জীববৈচিত্র্য গবেষক কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, ‘এসব নদ-নদী ও খাল ভরাটের ফলে হাওরের মাটির উর্বরতা ও প্রতিবেশও নষ্ট হচ্ছে। পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় কৃষি ও বাস্তুতন্ত্রের ওপরও প্রভাব পড়েছে।’
প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘উজানে মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিত খনন, বন উজাড়, পাথর উত্তোলনের ফলে ভাটির বাংলাদেশে নদীপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী ১৮টি। এ ছাড়া অসংখ্য খাল ও ছড়া রয়েছে। এগুলো বালু ও পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানিপ্রবাহ কমেছে। এতে নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নদ-নদীগুলো খননের একটি প্রাথমিক তালিকা করে প্রকল্প জমা দিয়েছি।’