প্রতিষ্ঠার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল এডুকেশন ইউনিট মিলনায়তনে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী। পরিচালনায় ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনজন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলেও গত কয়েক বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল পাটওয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পেরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে অফিস করছেন।
কোষাধ্যক্ষ জানান, প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহম্মেদ চৌধুরী সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই চারবার অবৈধভাবে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যেখানে ১১২টি পদ অনুমোদন করেছে, সেখানে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জনের নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮’ এর ১২(১০) ধারা অনুযায়ী, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া ২৪০ জনের অধিক কর্মচারীর চাকরি বাতিল এবং তাদের বেতন-ভাতা ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে স্থগিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামেন ওই নিয়োগপ্রাপ্তরা।
২০২২ সাল থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন শুরু করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, তালা ভেঙে কক্ষের আলমিরা ও ফাইল কেবিনেট থেকে জরুরি কাগজপত্র, ব্যাংকের চেক বহি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি লুট করার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তর করে ওসমানী মেডিকেল কলেজে চালানো হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী বলেন, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একদিন দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, ১ হাজার ২০০ শয্যার অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। এতে দেশের বাইরের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তিনি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক নেতা এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।