, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
‘সিলেটের পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত এটা বৈষম্যের শামিল’ অসমর্থ মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে : জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল হাসান নির্বাচনের আগেই বয়কট একাংশের : প্রশ্নবিদ্ধ সিলেট উইমেন চেম্বার সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে চিকিৎসকের লাথি মারার ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে কমিটি সিলেটে প্রতিবেশীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপি নেত্রীর পদ স্থগিত আমেরিকা ইউরোপের ৫টি দেশসহ উচ্চ শিক্ষার জন্য তিন সহস্রাধিক রেজিষ্ট্রেশন স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালকের দেওয়ানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন সুনামগঞ্জ হাওরে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গরুসহ বজ্রপাতে কলেজছাত্র নিহত সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মামুন বরখাস্ত বিশ্বনাথে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলা
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

কোম্পানীগঞ্জে পাথর কোয়ারীর হরিলুটে বিএনপি নেতারা, বন্ধে মাঠে নামলো যৌথবাহিনী

যৌথবাহিনী নামলো সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পাথর কোয়ারীর হরিলুট বন্ধে। ক্ষুধার্ত বারকি শ্রমিকদের উসকে দিয়ে রোপওয়ে বাঙ্কার লুটের পর এখন সাদা পাথর কোয়ারীতে কামড় বসিয়েছে রাজনীতিক পদধারী চাঁদাবাজরা। তাদের লোপাটে শেষ হয়েছে বাঙ্কারের কোটি কোটি টাকার পাথর। চোখের সামনে বিজিবির মদদে আর স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে প্রশয়ে, চাঁদার লোভে, শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়ে নিঃশেষ করা হয়েছে রোপওয়ে বাঙ্গার।

সম্পদের প্রাচুর্য ঘেরা এই বাঙ্গার রক্ষায় পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, নির্বিঘেœ রোপওয়ে ভক্ষণের পর রাজনীতিক প্রশয়ে লালিত শ্রমিকদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে সাদা পাথর কোয়ারীতে। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’, এমন মনোভাবে হরিলুটে মেতে উঠেছে স্থানীয় পদধারী বিএনপি নেতাদের একাধিক সিন্ডিকেট। এই অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ও রোপওয়ে (বাংকার) এলাকায় শুরু হয় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান। এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। অভিযানে ১০ জন বারকী শ্রমিক আটক হলেও, কোন চাঁদাবাজকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অভিযানে ৪টি ইঞ্জিন (লিস্টার) চালিত নৌকা ও ১০টি বারকি নৌকা জব্দ করা হয়। আটক ১০ জনের শ্রমিকের মধ্যে ৯ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ বছর করে কারাদ- দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বাকী একজন শিশু হওয়ার মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। আটকৃতরা হচ্ছেন ইকবাল মাহমুদ, মকবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. জজ মিয়া, মো. গিয়াস উদ্দিন, আলী নূর, ফুল মিয়া, মো. কিবরিয়া আহমেদ ও মো. আলীম উদ্দিন।

ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি ঘটতেই সাদা পাথরে পাথর লুটে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। এর মধ্যে প্রশাসন অভিযানে নামলে মারমুখি আচরণ শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের এমন আচরণের নৈপথ্যে রাজনীতির চাঁদাবাজদের উসকে দেয়া। গত ১৬ এপ্রিল বালু পাথর লুটপাটে বাধা দিলে, সশস্ত্র শ্রমিকরা হামলা চালায় প্রশাসনের উপর।

ওই ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানার এস আই নিয়াজ মোহাম্মদ শরিফ বাদী হয়ে ২০/২৫ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১(০৪) ২৫, জিআর ৭৭। তারপরও লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না বালু-পাথর রাজ্যে। লুটপাটে আধিপত্য গড়ে তুলতে সম্প্রতি স্থানীয় কলাবাড়ী ও কালাইরাগবাসী দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে কালাইরাগ গ্রামের এবং আশপাশের স্থানীয় মুরব্বিগণ দয়ার বাজার পয়েন্টে সমবেত হয়ে সালিশ বিচারে বসে কলাবাড়ীর লোকজনের সাথে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু কলাবাড়ী লোকজন ওই সময় মুরব্বিদের উপর হামলা করে। হামলাকারী কলাবাড়ী লোকজন বিএনপি সভাপতি সাহাব উদ্দিনের মামা ও মামাতো ভাইয়েরা।

অপরদিকে, স্থানীয় পূর্বপাড়ের বাংকারে সেইভ মেশিন থেকে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাজ উদ্দিন (৫ আগস্টের পরে সক্রিয়), ইউনিয়ন বিএনপি নেতা (উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের মামা) কলাবাড়ীর তেরা মিয়া, সিরাজ, জৈনউদ্দিন (তারা ৩ সহোদর)। এছাড়া উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নাল, জয়নালের ভাই জসিম ও তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরিদ, জয়নালের চাচাতো ভাই কালীবাড়ি গ্রামের যুবলীগ নেতা সাইদুর মিয়া এবং বিএনপি নেতা কামাল হাজী ও তার শালা (বডিগার্ড /হোন্ডা চালক) কালাইরাগের মতলিবের পূত্র করিম। করিমের মাধ্যমে ২টা সেইভ মেশিন দিয়ে বাংকার থেকে শতাধিক নৌকা পাথর তুলছে। গত কয়েক দিন বাংকারের সেইভ মেশিন চালানো ও সেইভের মেশিন থেকে প্রতি মেশিন থেকে প্রতিরাতে ১৫/২০ হাজার টাকা করে চাদা আদায় করতে গিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে স্থানীয় কালাইরাগবাসীর সাথে।

পরে এ ঘটনার মিমাংসায় নামেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন বিচারিক অবস্থান নিয়ে পাথর লুটে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খুবই কৌশলে। আধিপত্য নিয়ে কোন ঝামেলা হলেও তিনি বিচারিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অথচ তার আত্বীয় স্বজন সবাই সামনে থেকে পাথর লুটে মরিয়া। তার বোন জামাই জসিম ও তার গ্রামের বাড়ির পাহারাদার ভোলাগঞ্জের জাফর বাংকারে বালুর নৌকা থেকে বারকি প্রতি ৫০০ টাকা আদায় করছে। এছাড়া তাদের সহযোগী হয়েছে পূর্ব পাড়ের চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও পেশাদার অপরাধী মনির ও হাবিল। তাদের নেতৃত্ব আরো ১৫/২০ জন রয়েছে চাঁদাবাজি টাকা সংগ্রহে।

অন্যদিকে, পাথর কোয়ারী লুট ও চাদাবাজিতে রয়েছেন পশ্চিম পাড়ের ভোলাগঞ্জ গ্রামের নেতৃত্ব দুলা মিয়া মেম্বার ও তার ছেলে ইকবাল এবং ভোলাগঞ্জের জসিম, সাজন, জাহাঙ্গীর, নোমান, আওয়ামী লীগের খইরুল্লার ছেলে রিয়াজ ও আওয়ামী লীগ কর্মী ইন্তাজ আলী। এ ছাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক দুদুর ভাই ভোলাগঞ্জের আনোয়ার ও বুরহান রোপওয়ে বাঙ্কারের শিমুলতলায় বেশ বড় কয়েকটি পাথরের গর্ত থেকে সাধারণ শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে এখন নিজেরাই দখল করে বালু ও পাথর উত্তোলন করতেছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সদ্য সাবেক সভাপতি এলাইছ আহমদ ও ভাইদের নেতৃত্বে আলাদা আরেকটা চাঁদাবাজচক্র দিনে ও রাতের বেলায় বাংকারে পাথর নৌকা থেকে ২০০/৩০০ করে চাঁদা আদায় করছে অবাধে। অপরদিকে, উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুক মেম্বারের আপন চাচাতো ভাই রাজনগর গ্রামের আতিক, বাবুল, জসিম সোহেল একটা সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্টের থেকে বাঙ্কার থেকে দিনে রাতে অবাধে মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি ও লুটপাট করে।

বর্তমানে এই চক্রের ৪/৫টা সেইভ মেশিন দিয়ে বাংকারের পাথর উত্তোলন করছে। গত সপ্তাহে এসি ল্যান্ডের উপস্থিতিতে বাংকারে সেইভ মেশিনে অভিযানে প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে পাথর চুরির একাধিক মামলা।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজের বেশিরভাগ সদস্যই উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং পূর্ব ইসলাম পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি (৫ আগস্ট পূর্বে গত কয়েক বছর নিষ্ক্রিয়) তাজ উদ্দিনের ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

গত কয়েক দিন আগে তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে রাতের বেলা চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তাজ উদ্দিনের রডের আঘাতে দ. কলাবাড়ী গ্রামের বাবুল আমিনে ভাই বারকি শ্রমিক গুরুতর আহত হয়।

গত কিছুদিন থেকে সাদা পাথর ও বাংকার লুটপাটের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। লুটপাটের সত্যতা বাস্তবিক হওয়ায় গতকাল উপজেলা প্রশাসন চালায় অভিযান।

সাদা পাথর লুটপাট বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন, আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, উপজেলা প্রশাসন ও বাহিনীর যৌথ অভিযান হলে সাদা পাথর রক্ষা করা সম্ভব। আজকের অভিযানে সবাইকে ২ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এর চেয়ে কঠোর শাস্তি আগামী অভিযানে দেয়া হবে। সমাজের সবাই মিলে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। এতেই সাদা পাথর ও বাঙ্কার রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয়

‘সিলেটের পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত এটা বৈষম্যের শামিল’

কোম্পানীগঞ্জে পাথর কোয়ারীর হরিলুটে বিএনপি নেতারা, বন্ধে মাঠে নামলো যৌথবাহিনী

প্রকাশের সময় : ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

যৌথবাহিনী নামলো সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পাথর কোয়ারীর হরিলুট বন্ধে। ক্ষুধার্ত বারকি শ্রমিকদের উসকে দিয়ে রোপওয়ে বাঙ্কার লুটের পর এখন সাদা পাথর কোয়ারীতে কামড় বসিয়েছে রাজনীতিক পদধারী চাঁদাবাজরা। তাদের লোপাটে শেষ হয়েছে বাঙ্কারের কোটি কোটি টাকার পাথর। চোখের সামনে বিজিবির মদদে আর স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে প্রশয়ে, চাঁদার লোভে, শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়ে নিঃশেষ করা হয়েছে রোপওয়ে বাঙ্গার।

সম্পদের প্রাচুর্য ঘেরা এই বাঙ্গার রক্ষায় পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, নির্বিঘেœ রোপওয়ে ভক্ষণের পর রাজনীতিক প্রশয়ে লালিত শ্রমিকদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে সাদা পাথর কোয়ারীতে। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’, এমন মনোভাবে হরিলুটে মেতে উঠেছে স্থানীয় পদধারী বিএনপি নেতাদের একাধিক সিন্ডিকেট। এই অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ও রোপওয়ে (বাংকার) এলাকায় শুরু হয় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান। এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। অভিযানে ১০ জন বারকী শ্রমিক আটক হলেও, কোন চাঁদাবাজকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অভিযানে ৪টি ইঞ্জিন (লিস্টার) চালিত নৌকা ও ১০টি বারকি নৌকা জব্দ করা হয়। আটক ১০ জনের শ্রমিকের মধ্যে ৯ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ বছর করে কারাদ- দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বাকী একজন শিশু হওয়ার মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। আটকৃতরা হচ্ছেন ইকবাল মাহমুদ, মকবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. জজ মিয়া, মো. গিয়াস উদ্দিন, আলী নূর, ফুল মিয়া, মো. কিবরিয়া আহমেদ ও মো. আলীম উদ্দিন।

ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি ঘটতেই সাদা পাথরে পাথর লুটে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। এর মধ্যে প্রশাসন অভিযানে নামলে মারমুখি আচরণ শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের এমন আচরণের নৈপথ্যে রাজনীতির চাঁদাবাজদের উসকে দেয়া। গত ১৬ এপ্রিল বালু পাথর লুটপাটে বাধা দিলে, সশস্ত্র শ্রমিকরা হামলা চালায় প্রশাসনের উপর।

ওই ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানার এস আই নিয়াজ মোহাম্মদ শরিফ বাদী হয়ে ২০/২৫ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১(০৪) ২৫, জিআর ৭৭। তারপরও লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না বালু-পাথর রাজ্যে। লুটপাটে আধিপত্য গড়ে তুলতে সম্প্রতি স্থানীয় কলাবাড়ী ও কালাইরাগবাসী দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে কালাইরাগ গ্রামের এবং আশপাশের স্থানীয় মুরব্বিগণ দয়ার বাজার পয়েন্টে সমবেত হয়ে সালিশ বিচারে বসে কলাবাড়ীর লোকজনের সাথে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু কলাবাড়ী লোকজন ওই সময় মুরব্বিদের উপর হামলা করে। হামলাকারী কলাবাড়ী লোকজন বিএনপি সভাপতি সাহাব উদ্দিনের মামা ও মামাতো ভাইয়েরা।

অপরদিকে, স্থানীয় পূর্বপাড়ের বাংকারে সেইভ মেশিন থেকে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাজ উদ্দিন (৫ আগস্টের পরে সক্রিয়), ইউনিয়ন বিএনপি নেতা (উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের মামা) কলাবাড়ীর তেরা মিয়া, সিরাজ, জৈনউদ্দিন (তারা ৩ সহোদর)। এছাড়া উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নাল, জয়নালের ভাই জসিম ও তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফরিদ, জয়নালের চাচাতো ভাই কালীবাড়ি গ্রামের যুবলীগ নেতা সাইদুর মিয়া এবং বিএনপি নেতা কামাল হাজী ও তার শালা (বডিগার্ড /হোন্ডা চালক) কালাইরাগের মতলিবের পূত্র করিম। করিমের মাধ্যমে ২টা সেইভ মেশিন দিয়ে বাংকার থেকে শতাধিক নৌকা পাথর তুলছে। গত কয়েক দিন বাংকারের সেইভ মেশিন চালানো ও সেইভের মেশিন থেকে প্রতি মেশিন থেকে প্রতিরাতে ১৫/২০ হাজার টাকা করে চাদা আদায় করতে গিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে স্থানীয় কালাইরাগবাসীর সাথে।

পরে এ ঘটনার মিমাংসায় নামেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন বিচারিক অবস্থান নিয়ে পাথর লুটে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খুবই কৌশলে। আধিপত্য নিয়ে কোন ঝামেলা হলেও তিনি বিচারিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অথচ তার আত্বীয় স্বজন সবাই সামনে থেকে পাথর লুটে মরিয়া। তার বোন জামাই জসিম ও তার গ্রামের বাড়ির পাহারাদার ভোলাগঞ্জের জাফর বাংকারে বালুর নৌকা থেকে বারকি প্রতি ৫০০ টাকা আদায় করছে। এছাড়া তাদের সহযোগী হয়েছে পূর্ব পাড়ের চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও পেশাদার অপরাধী মনির ও হাবিল। তাদের নেতৃত্ব আরো ১৫/২০ জন রয়েছে চাঁদাবাজি টাকা সংগ্রহে।

অন্যদিকে, পাথর কোয়ারী লুট ও চাদাবাজিতে রয়েছেন পশ্চিম পাড়ের ভোলাগঞ্জ গ্রামের নেতৃত্ব দুলা মিয়া মেম্বার ও তার ছেলে ইকবাল এবং ভোলাগঞ্জের জসিম, সাজন, জাহাঙ্গীর, নোমান, আওয়ামী লীগের খইরুল্লার ছেলে রিয়াজ ও আওয়ামী লীগ কর্মী ইন্তাজ আলী। এ ছাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক দুদুর ভাই ভোলাগঞ্জের আনোয়ার ও বুরহান রোপওয়ে বাঙ্কারের শিমুলতলায় বেশ বড় কয়েকটি পাথরের গর্ত থেকে সাধারণ শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে এখন নিজেরাই দখল করে বালু ও পাথর উত্তোলন করতেছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সদ্য সাবেক সভাপতি এলাইছ আহমদ ও ভাইদের নেতৃত্বে আলাদা আরেকটা চাঁদাবাজচক্র দিনে ও রাতের বেলায় বাংকারে পাথর নৌকা থেকে ২০০/৩০০ করে চাঁদা আদায় করছে অবাধে। অপরদিকে, উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুক মেম্বারের আপন চাচাতো ভাই রাজনগর গ্রামের আতিক, বাবুল, জসিম সোহেল একটা সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্টের থেকে বাঙ্কার থেকে দিনে রাতে অবাধে মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি ও লুটপাট করে।

বর্তমানে এই চক্রের ৪/৫টা সেইভ মেশিন দিয়ে বাংকারের পাথর উত্তোলন করছে। গত সপ্তাহে এসি ল্যান্ডের উপস্থিতিতে বাংকারে সেইভ মেশিনে অভিযানে প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে পাথর চুরির একাধিক মামলা।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজের বেশিরভাগ সদস্যই উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং পূর্ব ইসলাম পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি (৫ আগস্ট পূর্বে গত কয়েক বছর নিষ্ক্রিয়) তাজ উদ্দিনের ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

গত কয়েক দিন আগে তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে রাতের বেলা চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তাজ উদ্দিনের রডের আঘাতে দ. কলাবাড়ী গ্রামের বাবুল আমিনে ভাই বারকি শ্রমিক গুরুতর আহত হয়।

গত কিছুদিন থেকে সাদা পাথর ও বাংকার লুটপাটের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। লুটপাটের সত্যতা বাস্তবিক হওয়ায় গতকাল উপজেলা প্রশাসন চালায় অভিযান।

সাদা পাথর লুটপাট বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন, আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, উপজেলা প্রশাসন ও বাহিনীর যৌথ অভিযান হলে সাদা পাথর রক্ষা করা সম্ভব। আজকের অভিযানে সবাইকে ২ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এর চেয়ে কঠোর শাস্তি আগামী অভিযানে দেয়া হবে। সমাজের সবাই মিলে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। এতেই সাদা পাথর ও বাঙ্কার রক্ষা করা সম্ভব হবে।