সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও দ্রুততার জন্য সিলেট বিভাগের শীর্ষে উঠে এসেছে সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জে উপজেলা ভূমি অফিস। আর দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করে ভূমি সেবার বিভিন্ন সূচকে সিলেট বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটির প্রধান কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবুল হাছনাত।
তিনি ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল ই-নামজারি ওয়েবসাইট তথ্য অনুযায়ী দেশসেরা এসিল্যান্ড হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ই-নামজারি ও ই-মিউটেশন কার্যক্রমে অসাধারণ সফলতা, সরকারি জমি উদ্ধার, মিসকেস নিষ্পত্তি, সচ্ছতা ও গতিশীল রাজস্ব আদায় এবং সাধারণ মানুষকে দ্রুত ও ঘুষমুক্ত সেবা প্রদানের কারণে তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মোঃ আবুল হাছনাত যোগদানের পর এ অফিসের চিত্র পাল্টে যায়। তিনি ২০২১ সালে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন বিসিএস এর কর্মকর্তা। এসিল্যান্ড হিসেবে তিনি ইতিপূর্বে ভোলা জেলার ভোলা সদর, চরফ্যাশন, তজমুদ্দিন উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চার মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে কোম্পানীগঞ্জে যোগদান করে এমন চমক দেখিয়েছেন তিনি। নির্ধারিত অফিস ও জনবল সংকট, দক্ষতার ঘাটতি আর সার্ভারে সমস্যা মধ্যেও নাগরিক সেবা দিয়ে উপজেলাবাসির নজরে এসেছেন তরুণ এ কর্মকর্তা।
এ উপজেলায় কোন নির্দিষ্ট ভূমি অফিস না থাকায় তিনি যোগদানের পর পূর্ব থেকে দায়িত্ব পালনরত ৪ তহশিলদারকে নিয়ে নতুন সফটওয়ার স্হাপন করে দ্রুত সময়ে নামজারীর কার্যক্রম শুরু করেন।
নামজারী আবেদনের পর সকল কাগজ পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এক দিনের মধ্যেই তা নিষ্পত্তি করে দেন, যা গোটা দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
এ কার্যক্রমের জন্য আবুল হাছনাত গোটা উপজেলাবাসীর সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি মিসকেইস নিষ্পত্তিতে ও খুবই কম সময় নেন। সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সব টিকটাক থাকলে তাও দ্রুত শেষ করে দেন।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ও তিনি রেখেছেন অনবদ্য অবদান। উর্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ভোলাগঞ্জে ৭০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করেছেন।
উপজেলার বাসিন্দা মইন উদ্দিন মিলন নামে এক ভূমির মালিক জানান, আমি একটি নামজারির আবেদন করেছিলাম। সরকার নির্ধারিত সময় ২৮ দিন হলে মাত্র ১ দিনে আমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি নিয়ে অল্প সময়ে নামজারি আমার কাছে একেবারেই অকল্পনীয়। এর আগেও আমি ও আমার পরিবার একই ধরনের নামজারির আবেদন করে দুই থেকে চার মাস সময় লেগেছিল, সাথে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছিল।
সিলেটে অবস্থানরত উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, বর্তমান ভূমি অফিসার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সহ নামজারী আবেদন দ্রুত সময়ে সম্পাদন করে জনদূর্ভোগ লাগবের চেষ্টা সত্যি প্রশংসার দাবীদার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভূমি অফিসের সব ধরনের হয়রানী বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতি জনগণের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, একই অফিসে একটি মিসকেস শেষ হতে আগে ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত লেগে যেত। এখন এক মাসের মধ্যে সরকার নির্দারিত ফিতে সে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. আবুল হাছনাত যোগদানের পর ভূমি অফিসের চিত্র পাল্টে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। বর্তমানে দালাল কিংবা কোন রকম হয়রানির সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে আলাপকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুল হাছনাত বলেন, কোম্পানীগঞ্জকে ভূমি সেবার একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। ভূমি সেবাই স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও হয়রানি দূরীকরণ আমার প্রধান লক্ষ্য। জনগণের হয়রানি দূরীকরণ, অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দালালদের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেদের ফোন নাম্বার দিয়ে আবেদন করা, শুনানীতে উপস্থিত হওয়া ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বিষয়ে সচেতন করতে কাজ করছি। শুধু এ উপজেলায় নয়, দেশের যে কোন স্হানে অবস্থানকালীন সময়ে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততা ওদক্ষতার সহিত মানুষের কল্যানে কাজ করতে পারাটাই আমার মুল লক্ষ্য।